যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের বাসিন্দা ম্যাট জোনস। অসুস্থ অবস্থায় তিনি তার স্ত্রীর সাথে বাজি ধরে ৭০ মাইলের হাইকিং সম্পন্ন করেছে কাঁধে প্রায় ৩৭ কাজে ওজনের ফ্রিজ নিয়ে।
৩৬ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ম্যাট জোন্স ওয়েলসের ৪ হাজার ৫শ’ মিটার ক্লাইডিয়ান পর্বতশ্রেণিতে মোট দুইবার হেঁটেছেন।
বিবিসি, ওয়েলস অনলাইন এবং দ্য টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তার এই প্রচেষ্টা থেকে হোপ হাউস চিলড্রেন’স হাসপাতালে জন্য ৬৮ হাজার ডলার সংগ্রহ করা হয়েছে।
জোন্সের এই হাইকিংয়ের পেছনের গল্প শুরু হয়েছিল গত সেপ্টেম্বরে, যখন তিনি কোমরে অস্ত্রোপচার করার পর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার স্ত্রী ভিকির সাথে তার একটি বাজি হয়েছিল।
‘সার্জন আমাকে বলছিলেন যে আমাকে ধীরে চলতে হবে, নাহলে শরীরের অন্যান্য অংশে আরও ক্ষতি হবে, জোন্স তার ফান্ডরেইজিং পেজে লিখেছেন।
তিনি যোগ করেন, ‘ভিকি ঘরের কোণে বসে হাসছিল আর সার্জনকে বলছিল, ‘আপনি যেন একটা ইটের দেয়ালের সাথে কথা বলছেন!’
জোন্স বলেন, ভিকি সার্জনকে বলেছিলেন যে তিনি ২০১৮ সালে এই হাইকিং সম্পন্ন করেছিলেন, যেখানে প্রথম মাইলেই তার গোড়ালি ভেঙে গিয়েছিল এবং অ্যাকিলিস টেন্ডন কেটে গিয়েছিল।
তবুও তিনি বাকি ৩৪ মাইল আহত অবস্থায় শেষ করেছিলেন। এর ফলে তাকে হাসপাতালে চার দিন থাকতে হয়েছিল এবং দুটি অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছিল।
ভিকি মজা করে সার্জনকে বলেছিলেন, ‘এই বোকা লোকটা পরের বার ফ্রিজ নিয়ে হাইকিং শেষ করার চেষ্টা করবে!’
ম্যাট উত্তরে তখন জবাব দেয়, ‘আমি যদি সুস্থ হই তাহলে ফ্রিজ নিয়ে দুইবার হাইকিং করবো।’
এই কথোপকথনই একটি বাজিতে পরিণত হয়। জোন্স বলেন, অস্ত্রোপচারের পর তিনি কখনই ভাবেননি যে তিনি এমন কীর্তি অর্জন করতে পারবেন, কিন্তু ভিকি তার ওপর আত্মবিশ্বাসী ছিলেন।
দুর্ভাগ্যবশত, গত বছরের ক্রিসমাসের দুই দিন আগে ভিকি মারা যান। তিনি চার সন্তানের মা ছিলেন।
জোন্স ফান্ডরেইজিং পেজে আরও লিখেন, ‘ভিকি ছিলেন সুন্দর, ভিতরে ও বাইরে।
তিনি ছিলেন স্নেহশীল, যত্নশীল, বিশ্বস্ত, উদার, নিবেদিত, ইতিবাচক এবং সাহসী। তিনি যে ঘরে যেতেন, সেই ঘর আলোকিত হয়ে উঠত, সবাইকে মুগ্ধ করতেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভিকি অন্যদের অনুপ্রাণিত করতে পারতেন। সবসময় অন্যদের আগে ভাবতেন, কখনও কখনও অত্যধিক।
যে কাউকে সাহায্য করতেন, এমনকি যদি তাদের ভালোভাবে না চিনতেন তখনও।’
চলতি বছরের জানুয়ারিতে, জোন্সের সন্তানেরা বাজিটির কথা তাকে ম্যাটকে করিয়ে দিলে তিনি বলেন যে তার সন্তানদের মাকে দেয়া সেই প্রতিশ্রুতি রাখবেন।
গত শনিবার (৩১ মে) নির্ধারিত ল্যাংলোলেন রাউন্ডের জন্য প্রশিক্ষণ শুরু হয়, যা জোন্সের ভাষায় ছিল নির্মম।
তাকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ক্লাইডিয়ান পর্বতমালা জুড়ে ৭০ মাইল এবং ১৫,০০০ ফুটের বেশি উচ্চতা অতিক্রম করতে হবে—এবং সবই প্রায় ৩৭ পাউন্ডের ফ্রিজ বহন করে।
‘এটি নিঃসন্দেহে আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন প্রশিক্ষণ ছিল, শারীরিক ও মানসিকভাবে; পাহাড় এখন আমার উপাসনালয় হয়ে গেছে,’ প্রাক্তন ব্রিটিশ আর্মি কমান্ডো জোন্স লিখেন।
তিনি ওয়েলস অনলাইনকে বলেন যে এই প্রচেষ্টা শুরুতে তার এবং তার সন্তানদের মধ্যে একটি ব্যক্তিগত বিষয় ছিল,
কিন্তু স্থানীয় লোকজন তাকে পিঠে ফ্রিজ নিয়ে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিতে দেখে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
‘প্রশিক্ষণ শুরু হলে লোকেরা একে অন্যর সাথে বলাবলি শুরু করে, ‘তুমি কি ওই লোকটার কথা শুনেছ যে পিঠে ফ্রিজ নিয়ে পাহাড়ে ঘুরছে?’
তখন আমি আর এটি গোপন রাখতে পারলাম না,’ ম্যাট বলেন।
দ্য টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চ্যালেঞ্জের প্রথম দিনে খারাপ আবহাওয়ার কারণে জোন্স হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কয়েক ঘণ্টা ঘুমানোর পর তিনি আবার শুরু করেন ।
চ্যালেঞ্জ শেষ করার পর ম্যাট বলেন, ‘আমার পুরো শরীর ব্যথায় চিৎকার করছিল।
সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তে, ভিকির কণ্ঠস্বর আমাদের চার সন্তানের মাধ্যমে আমাকে বলছিল, ‘তুমি পারবে।’