মধ্যবিত্তের ওপর করের বোঝা, বাড়বে সাংসারিক খরচ। ৪ জুন ২০২৫

মধ্যবিত্তের ওপর করের বোঝা, বাড়বে সাংসারিক খরচ।

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত থেকে রেহাই দিতে অন্তর্বর্তী সরকার বাজেটে পদক্ষেপ নেবে-এমন আশা ছিল মধ্যবিত্তের।

সেই আশায় গুড়েবালি, অর্থ উপদেষ্টা হাঁটলেন সেই পুরোনো পথেই। কর হার বাড়িয়ে-কমিয়ে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য পূরণকে প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি।

ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়েছেন ঠিকই, কিন্তু সঙ্গে বাড়িয়ে দিয়েছেন করহারও। সরকারি কিছু সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতার শর্ত বাতিল করেছেন।

এতে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় ও নিত্যব্যবহার্য পণ্যের ভ্যাট হার বাড়িয়ে দেওয়ায় সংসার খরচ বাড়বে মধ্যবিত্তের।

অর্থ উপদেষ্টার প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য আয়করে ছাড় দেননি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ঘোষণা অনুযায়ী করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকাই রেখেছেন।

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সাধারণত মধ্যবিত্ত শ্রেণির আয় এটি। আবার শহর-গ্রামাঞ্চলের সব করদাতার ন্যূনতম কর ৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। বাজেটে স্ল্যাব পরিবর্তন ও করহার বাড়ানোয় মধ্যবিত্তের ওপর করের বোঝা বাড়বে।

আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট খাতে বাজেটে বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। যার কারণে মধ্যবিত্তের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। যেমন অব্যাহতির সংস্কৃতির পরিহার করতে রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এতে দেশীয় ফ্রিজ-এসির দাম বাড়তে পারে। মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনে হ্রাসকৃত ভ্যাট হার বাড়ানো হয়েছে। উৎপাদনের ক্যাটাগরিভেদে ২ থেকে আড়াই শতাংশ ভ্যাট বাড়ানোয় দেশে তৈরি মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে।

বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালি সামগ্রী, হাইজেনিক ও টয়লেটসামগ্রী উৎপাদনে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

এতে এইসব পণ্যের দাম বাড়বে। শেভিং কাজে ব্যবহৃত ব্লেডের দাম বাড়তে পারে। কারণ স্টেইনলেস স্টিলের স্ট্রিপ থেকে প্রস্তুত ব্লেড এবং কার্বন স্টিলের স্ট্রিপ থেকে প্রস্তুতকৃত ব্লেডের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।

অনেক মধ্যবিত্তের স্বপ্ন থাকে নিজের বাড়ি নির্মাণ বা ফ্ল্যাট কেনার। সেই স্বপ্ন পূরণে বাজেট বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ বাজেটে রড, এঙ্গেল বার তৈরির প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপের সুনির্দিষ্ট করের পরিমাণ এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে।

এছাড়া বিলেট-ইনগট সুনির্দিষ্ট কর এবং স্ক্র্যাপ গলানোর রাসায়নিকের ফেরো ম্যাঙ্গানিজ ও ফেরো সিলিকা ম্যাঙ্গানিজের শুল্ক কর বাড়ানো হয়েছে। বিধায় নির্মাণ সামগ্রীর প্রধান উপকরণ রডের দাম বাড়তে পারে।

আবার বাসা-বাড়ির মেঝেতে ব্যবহৃত মার্বেল-গ্রানাইট পাথর আমদানির সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে মার্বেল-গ্রানাইটের দাম বাড়তে পারে।

বাজেটে বাচ্চাদের খেলনার দাম বাড়বে। কারণ স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে বাজেটে বিদেশি খেলনার ট্যারিফ মূল্য বাড়ানো হয়েছে। এতে বিদেশি খেলনার দাম বাড়বে।

নারী-শিশুদের পছন্দের চকলেটের দামও বাড়তে পারে। চকলেট আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব থাকছে বাজেটে।

বিভিন্ন ধরনের চকলেটের শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য ৪ ডলার। এটি বাড়িয়ে ১০ ডলার করা হয়েছে। এতে আমদানিকৃত সব ধরনের চকলেটের দাম বাড়তে পারে।

নারীর সৌন্দর্যবর্ধনে ব্যবহৃত বিদেশি কসমেটিক্স লিপস্টিক, লিপলাইনার, আইলাইনার, ফেস ক্রিম, ফেস ওয়াশ, ময়েশ্চারাইজার লোশন, মেকআপ ফাউন্ডেশন ও মেকআপ কিটের ন্যূনতম আমদানি মূল্য প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। এতে এইসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *